শিক্ষা ডেস্ক: মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি পরীক্ষায় নটর ডেম কলেজের কতজন চান্স পেয়েছে, এটি অনেকেরই জানতে চাওয়া। প্রতিবছর বুয়েটসহ দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান থেকে শীর্ষ স্থানগুলো এই কলেজটির দখলে থাকে। গত বছর বুয়েটে মেরিট লিস্টের ৯৪৫ জনের মধ্যে ২৩০ জনই ছিল এই কলেজের। এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চমক দেখিয়েছে নটর ডেম।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৫২৩ জন নটরডেমিয়ান বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে সারাদেশ থেকে এবার সর্বমোট ৪ হাজার ৩৫০ জন চান্স পেয়েছেন। এদের মধ্যে ১২ ভাগই নটরডেমিয়ান।
Notre Damians Worldwide গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী গ্রুপ এবং বিভিন্ন সোর্স থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেকেই হয়ত চান্স পেয়েছে কিন্তু কাউকে জানায়নি।
কলেজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর নটর ডেমের বিজ্ঞান শাখা থেকে মোট ২ হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ১৪টি বাংলা ও ২টি ইংরেজিসহ মোট ১৬টি ভার্সনে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়। যদিও করোনার কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্তো পিয়াস রোজারিও ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কলেজ থেকে মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন সুযোগ পেল কলেজ থেকে সেটার তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও আমাদের তথ্য দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, বুয়েট, মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর কতজন নটর ডেম থেকে চান্স পেল সেই তথ্য ওই বছরের বিভিন্ন ব্যাচ এবং আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করে। যা আমরা আন-অফিসিয়ালি জানতে পারি। এবার মেডিকেল ভর্তিতে রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী চান্স পেয়েছে বলে আমি জেনেছি।
Notre Damians Worldwide নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৫২৩ জন নটরডেমিয়ান বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে সারাদেশ থেকে এবার সর্বমোট ৪ হাজার ৩৫০ জন চান্স পেয়েছেন। চান্সপ্রাপ্তদের মধ্যে ১২ ভাগই নটরডেমিয়ান।
নটর ডেম কলেজের ২০১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রেজওয়ানুর রহমান রাহী বলেন, আমি নটর ডেম থেকে পাস করার পর বুয়েটে ভর্তির হওয়ার সুযোগ পাই। এখন অস্ট্রেলিয়ার একটি আইটি কোম্পানিতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছি।
কলেজের বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এ কলেজের মূলমন্ত্র হলো শৃঙ্খলা। একজন ছাত্রকে তারা যেভাবে গড়ে তোলেন, বাংলাদেশে ক্যাডেট কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও এমনটা দেখা যায় না। মূল একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি অসাধারণ। এ কলেজের শিক্ষার্থী মানেই শুধু একাডেমিক পড়া নিয়েই থাকে- এমন নয়। এর বাইরে কলেজের বিভিন্ন ক্লাবে যুক্ত হতে হয় তাদের। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে শতভাগ স্বচ্ছ থাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে কলেজের শিক্ষক স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স (কাউন্সিলিং) সুশান্ত বলেন, প্রথমে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের বেছে নেওয়া হয়। ভর্তির পর একটি নির্ধারিত নিয়মনীতি, শৃঙ্খলার মধ্যে তাদের পড়াশোনা করতে হয়। শুধু এখানেই থেমে নেই, তাদের যথাযথ পরিচর্যা ও অত্যন্ত ভালোবাসার সঙ্গে পাঠদান করা হয়।
তিনি বলেন, এ কলেজে যে শুধু দেশসেরা মেধাবীরাই ভর্তি হচ্ছে তা কিন্তু নয়, দেশের সুবিধাবঞ্চিত, সংখ্যালঘুদের একটি অংশকেও তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই বেছে নেন। পরবর্তীতে তারাও কলেজের পরিচর্চা ও সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে মেধাবী হয়ে ওঠেন।
সুশান্ত জানান, ২০১২ সাল থেকে একাদশ শ্রেণির ভর্তি এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয়ভাবে হলেও নটরডেম কলেজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে।
জানা গেছে, এ কলেজটি খ্রিষ্টান মিশনারি কর্তৃক পরিচালিত। এ প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া। তবে সময়ের পরিবর্তনে এটি সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুসলিম শিক্ষার্থীদের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় কলেজটিতে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মুসলিম। এ কলেজ থেকে পড়াশোনা করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে থেকেও নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রেখেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে তারা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘নটরডেমিয়ান’ নামে পরিচিত।